ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করে বাংলাদেশের যেভাবে উপকার করলেন মোদি
বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আইন লঙ্ঘন করল। আর ভারতের এই কাজই বাংলাদেশের জন্য দাবার পরবর্তী চাল দিতে সুবিধা করে দিল। উল্লেখ্য, 2020 সালের জুনে জারি করা এক আদেশে বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়েছিল ভারত। ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের ফলে মোটা দাগে বাংলাদেশ দুই রকমের অসুবিধায় পড়তে পারে। প্রথমত, ভারতের মাটি ব্যবহার করে বাংলাদেশ, নেপাল বা ভুটানে সরাসরি রপ্তানি কার্যক্রম চালাতে পারবে না বলে মনে করছেন বাণিজ্য বিশ্লেষকরা। যদিও ভারতের তরফে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ভুটান এবং নেপালের সাথে বাণিজ্য করতে কোনও অসুবিধে হবে না।
যদিও ভারত সরকারের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন বলছে ভিন্ন কথা। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের একটা অংশ এতদিন ভারতের বিমান বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে রপ্তানি করা হতো। এর ফলে ভারত মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় করত। এখন বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট শিল্প ভারতের বন্দর ব্যবহার করতে পারবে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দুই সমস্যার সমাধানও বাংলাদেশের কাছে আছে। প্রথমত, বাংলাদেশের সাথে নেপাল ও ভুটানের বাণিজ্য সাময়িক সময়ের জন্য বাধাগ্রস্ত হলেও এতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে খুব একটা প্রভাব পড়বে না।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ তার তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য আপাতত সিলেট এবং ঢাকা বিমান বন্দর ব্যবহার করবে। একই সাথে বাংলাদেশ তার বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডেলিং ক্ষমতা বাড়াতে বাধ্য হবে। ফলে দেশের বিমান বন্দরের সক্ষমতাও বাড়বে। এছাড়া বাংলাদেশের জন্য রপ্তানি করার ক্ষেত্রে মালদ্বীপের দরজা উন্মুক্ত আছে। শ্রীলঙ্কার বন্দরও চাইলে বাংলাদেশ ব্যবহার করতে পারে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মালদ্বীপের বন্দর ব্যবহার করে বিদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু করেছে।
তাই বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের ফলে বাংলাদেশ সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা সমস্যায় পড়লেও তা কাটিয়ে উঠতে পারবে। কিন্তু ভারতের এই পদক্ষেপ বুমেরাং হয়ে ভারতের বিপক্ষে যাবে বলে মত দিয়েছেন অনেক ভূ রাজনীতি বিশ্লেষক। ভারত বর্তমানে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে সড়ক, নৌ, রেল সব পথে ট্রানজিট এবং একই সাথে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা লাভ করছে। এর ফলে ভারতের সেভেন সিস্টারের রাজ্যগুলোতে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক কম খরচে ও অনেক কম সময়ে পণ্য পরিবহন করতে পারে ভারত। কিন্তু পারস্পারিক সুবিধা বিনিময়ের আওতায় কোন চুক্তি এক পক্ষ যদি সুবিধা প্রদান করা বন্ধ করে দেয়, তবে অন্য পক্ষ যে কোন সময় তার কাউন্টারপার্ট কে সুবিধা দেয়া বন্ধ করতে পারে। ভারতকে বাংলাদেশ মূলত মাল্টিমোডাল বা বহুমাত্রিক ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিতে শুরু করে 2010 সাল থেকে। বর্তমানে দু'দেশের মধ্যে নৌ প্রটোকলের আওতায় কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে, তারপর আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া আগরতলা পর্যন্ত।
সড়ক পথে ভারতীয় পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। 2016 সাল থেকে এই সুবিধা পেয়ে আসছে ভারত। এছাড়া চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে ভারত তার মূল ভূখন্ড থেকে উত্তর পূর্বে সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোতে নিয়মিতভাবে পণ্য আনা নেয়ার কাজ করছে। 2020 সালের এক চুক্তির আওতায় 2020 সালের জুলাই মাস থেকে ভারত এ সুবিধা পাচ্ছে। ভারত বাংলাদেশ থেকে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট বাবদ এত সুবিধা প্রাপ্তির বিপরীতে বাংলাদেশকে প্রদত্ত সীমিত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করার মাধ্যমে নিজেদের প্রাপ্য সুবিধা আদায়ের পথকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে বলে অনেক ভূ রাজনীতি বিশ্লেষক মত দিয়েছেন। তারা বলছেন, বল এখন বাংলাদেশের কোর্টে। চাইলে যে কোন সময় ভারতকে দেয়া এসব সুবিধা বাতিল করতে পারে। এছাড়াও ভারতকে প্রদত্ত সুবিধা বাতিলের কথা সামনে এনে বাংলাদেশ তার প্রাপ্য সুবিধা লাভ করার জন্য দরকষাকষি করতে পারবে। সব মিলিয়ে ভূরাজনীতি বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, ভারতের এই পদক্ষেপের ফলে ভারত নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার পথ খুলে দিয়েছে।
0 Comments